ইমরান ইমি: তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছেন। যাকে ঘিরে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা। দূর প্রবাসে বসেও যিনি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন একটি বৈষম্যহীন সুন্দর আগামীর বাংলাদেশের। যার নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের সুদীর্ঘ পথচলা। যার দিক নির্দেশনায় সফলতা এসেছে হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের। পতন হয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসনামল। তিনি বীর, তিনি মহানায়ক তারেক রহমান। যার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে রচিত হবে এক অনন্য অধ্যায়। ঢাকার বুকে সেদিন লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতি রচিত অধ্যায়ের সাক্ষী হবে পুরো বিশ্ব।
বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে বিএনপি তথা জিয়া পরিবার নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যা অদ্যবদি চলমান রয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের সাথে দেশী-বিদেশী চক্র যেমন রয়েছে, তেমনিভাবে ওতপ্রোতভাবে রয়েছে যারা মাতৃভূমি বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত চাই তারা। ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তাঁর দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফার রহমান কোকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে জনগণ থেকে বিচ্যুত করতে চেয়েছিল। এরপর তথাকথিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠে জিয়া পরিবার এবং আগামী দিনের নেতৃত্ব তারেক রহমানকে দমন করতে। এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে হাসিনা সরকার তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ নিষিদ্ধ করে, মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু তাতে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সফল হয়নি। কারণ সত্য একদিন উন্মোচিত হবে এবং সেটাই হয়েছে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়। হাসিনার উদ্দেশ্য ছিল তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারকে দমানো গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। যার কারণে বিচার ব্যবস্থাকে নিজের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নে কাজ করেছে। কিন্তু এতে করে তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের জনপ্রিয়তা কমেনি বরং বেড়েছে হাজারো গুণ। ধীরে ধীরে জনগণের মনের গহীনে জায়গা করে নিয়েছেন তারেক রহমান তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা ও নেতৃত্ব’র মাধ্যমে।
তারেক রহমান নির্বাসিত জীবন কাটালেও তাঁর মনপ্রাণ ছিল দেশের মাটিতে। দেশকে আধিপত্যবাদমুক্ত করতে দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার, ভোটের অধিকার ও সর্বোপরি নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় এবং সুযোগ্য নেতৃত্বে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। যার মাধ্যমে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণঅভূত্থানের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সফলতা বয়ে এনেছে।
তিনি যখন ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ‘প্রিয় বাংলাদেশবাসী … আসসালামু আলাইকুম’ বলে তখন মুহুর্তেই বদলে যায় ঢাকার চিত্র। মুহূর্তেই চারদিকের জনতার মধ্যে যেন কী একটা ঘটে গেল! সবাই দুই হাত তুলল। শূন্যে লাফ দিল কেউ কেউ; কেউ কেউ পাশে দাঁড়ানো আরেকজনকে জড়িয়ে ধরল! এ এক অভাবনীয় দৃশ্য! এরই মাঝে এক বয়স্ক লোককে দেখা যায়, পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে চোখ মুছছেন। কী ব্যাপার! তিনি চোখ মুছলেন কেন? কাঁদছেন কেন? সেদিন তারেক রহমানের সেই বক্তব্যে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেয় বিএনপি। নতুন বাংলাদেশে দেশবাসীর সঙ্গে দেখা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারেক রহমান।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অস্থির এক পরিস্থিতিতে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য তারেক রহমান কাজ করেছেন। বিএনপির কর্শী সমর্থক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐকব্যবদ্ধ হয়েছে। দৃশ্যমান শত্রু আওয়ামী লীগ ও অদৃশ্য শত্রু মোকাবিলা করে এই সময়ে বিএনপি সর্বোচ্চভাবে দেশ ও দেশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপই জনগণের পদক্ষেপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত জনবান্ধব ও জনগণের সিদ্ধান্তে পরিণত হয়েছে। জনগণের ক্ষমতায়নে তারেক রহমান তাই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যা ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের কল্যাণে আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি কাজ করবে। কোনো দেশের স্বার্থে নয়, জনগণ ও দেশের স্বার্থই বিএনপির কাছে সবার আগে। যা তারেক রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক স্লোগান, ‘আমার আগে আমরা, আমাদের আগে দেশ, ক্ষমতার আগে জনতা, সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানে প্রতীয়মান হয়েছে।
৫ আগস্টের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটে তিনি চাইলে জাতীয় সরকারে মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ নিতে পারতেন। কিন্তু যার চিন্তা চেতনায় জনগণের ক্ষমতায়নের, সেখানে তিনি তা গ্রহণ করেননি। তিনি জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনকে সমর্থন দিয়েছেন।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে বাংলাদেশের আপামর জনতার। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের নির্বাসিত জীবন থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করবেন দেশের মানুষের আশা ভরসাস্থল আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের মহানায়ক তারেক রহমান। আমরা আশাবাদী, তারেক রহমানের স্বদেশে আসার মাধ্যমে দেশের আকাশে ঘুরপাক খাওয়া ঘন কালো মেঘ চলে যাবে। বিজয়ের মাসে তারেক রহমানের নেতৃত্বে উদিত হবে নতুন সূর্যের। যার মাধ্যমে ৭১ ও ২৪ এর পরাজিত শক্তিকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।
লেখক:
সাংবাদিক ও ক্রীড়া সংগঠক
মুঠোফোন : ০১৮৩৩০০৫৫০৭